ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
শেষ মুহূর্তে এসে এখন প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে লবিং-তদবির-দৌড়ঝাঁপ-দেনদরবারে ব্যস্ত তারা। প্রভাবশালী নেতাদের বাসা-বাড়িতে এখন রীতিমত উপচে পড়া ভিড়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে ‘তুষ্ট’ করার জন্য হেন চেষ্টা নেই, যা তারা করছেন না। ঠাকুরগাঁও-১ আসনে ধানের শীষ মার্কা ইতোমধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একক প্রার্থী হিসেবে মনোনীত সেটি দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অপর দিকে নৌকায় মনোনয়ন পেতে আওয়ামীলীগ থেকে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়ন ক্রয় ও জমা দিয়েছেন ১৪ জন। বিভিন্ন মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায় ইতোমধ্যে রংপুর বিভাগের আসন গুলো প্রার্থী চূড়ান্ত করার তালিকায় প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে বর্তমান সাংসদ সদস্য রমেশ সেনের নামও রয়েছে। ঠাকুরগাঁও এই আসটিতে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তনের আশায় ছিল তৃনমুল থেকে জেলা আওয়ামীলীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মী।
মিডিয়ার ঠাকুরগাঁও-১ আসনের নৌকার প্রার্থী রমেশ চন্দ্র সেনের নাম থাকায় আওয়ামীলীগের কর্মীদের মধ্য চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। যা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লক্ষনীয়। সোমবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তালিকা মনগড়া দাবি করে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জোটগতভাবেই দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। মনোনয়ন নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তালিকা মনগড়া, এগুলোর অবাস্তব, সম্মত ভিত্তি নেই।’ এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রীসহ প্রায় ৫০ জন এমপি মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন তা বিভিন্ন সূত্র জানা গেছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ঠাকুরগাঁওয়ের এক মনোনয়ন প্রত্যাশী বলেন, দলের সভানেত্রী সাক্ষাতকার গ্রহনের সময় বলেছেন ‘পুরনোদের বিদায় না করলে কীভাবে নতুনরা স্থান পাবে? বাদ পড়াদের তালিকায় কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্যও আছেন।’ তাই যাকে নৌকা মার্কা দিয়ে পাঠাবো তাকেই জয়ী করে আনতে হবে। তাই নৌকাকে আবারো বিজয়ী করার লক্ষ্যে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নতুন নৌকার মাঝি হিসেবে প্রয়াত এমপি খাদেমুল ইসলামের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সাহেদুল ইসলাম সাহেদকে গুরুত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন গুলোর নেতারা। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বরাবই বলে আসছেন আগামীতে দলের হাল ধরার জন্য এখন থেকেই তরুনদের তৈরি করতে হবে। সেই দিক বিবেচনা করতে করলে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে ১৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে তরুন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে প্রয়াত এমপি খাদেমুল ইসলামের ছেলে সাহেদের নাম আওয়ামী লীগের নেতা মুখে মুখে।
সাহেদুল ইসলাম সাহেদ নতুন প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কা পেলে বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে হারানো সম্ভব বলে বেশির ভাগ আওয়ামীলীগ ও সাধারণ ভোটারও মনে করছেন। স্থানীয় কয়েকজন প্রবীণ রাজনৈতিক জানান, বর্তমান এমপি’র অবদান রয়েছে এ সরকারের উন্নয়নে ক্ষেত্রে। যেহেতু উনি দলের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে একজন। তাই ঠাকুরগাঁওয়ের এক সময়ের উন্নয়নের রূপকার ও জন মানুষের বন্ধু প্রয়াত এমপি খাদেমুল ইসলাম যেভাবে আওয়ামী লীগকে সু-সংগঠিত করেছিলেন তা এখনো মানুষ মনে রেখেছে। তার ছেলে সাহেদুল ইসলাম একজন শিক্ষিত ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। আমরা আশাবাদী দলের সভানেত্রী তাকে নৌকা মার্কায় মনোনয়ন দিলে তিনি তার বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে পারবেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপিরবারে হত্যার পর সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর যে জুলুম নির্যাতন নেমে আসে সেই রোষানল থেকে তিনিও মুক্তি পাননি। তাকে দশ মাস কারাগারে রাখা হয় । জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি আওয়ামী রাজনীতির সবচেয়ে সংকটাপন্ন সময়ে ঠাকুরগাঁও মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহন করে দল কে সংগঠিত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সফলভাবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে ঠাকুরগাও-১ আসন হতে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। অবশেষে ১৯৯৬ সালের ১৭-ই ডিসেম্বর সংসদ সদস্য থাকাকালীন হৃদযন্ত্রের ক্রীড়া বন্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই জননেতা। পরে উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান এমপি রমেশ চন্দ্র সেন নৌকা প্রতিকে নির্বাচিত হোন। প্রয়াত খাদেমুল ইসলামের সাথে নির্বাচনে সব সময় হেরে বিএনপির প্রার্থী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সর্বশেষ ২০০১ সালে বর্তমান এমপি রমেশ সেন হারিয়ে মির্জা আলমগীর এই আসনে এমপি নির্বাচিত হোন। খাদেমুল ইসলামের মৃত্যুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে সদ্য এমএ পাশ করা সাহেদুল ইসলাম কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানে বাংলাদেশী হাইকমিশনের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। অপর দিকে বিএনপিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আসটি পুনরুদ্ধার করতে চান এবার। ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব আমাদের অভিভাবক। এই আসনে তাঁর কোনো বিকল্প নেই। সুষ্ঠু ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হলেও এতে পরিবর্তন ও সংযোগনের সুযোগ রয়েছে। সংসদীয় বোর্ডের সদস্যরা দলের সভাত্রেী শেখ হাসিনা এই দিয়েছেন। তাই শেষ মুহূর্র্তে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলের সভানেত্রীর দিকে দৃষ্টি রাখছেন।